বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মুন্সিগঞ্জের হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে হিমাগারগুলোতে প্রচুর পরিমাণ আলু আসতে শুরু করেছে। তবে অধিকাংশ আলু আসছে উত্তরবঙ্গ থেকে। কেননা মুন্সিগঞ্জে এখনো পুরোপুরি আলু তোলা শুরু হয়নি।
জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জে প্রতি বছর আলুর ব্যাপক আবাদ হয়। মৌসুমের শুরুতে বাজারে আলুর দাম কিছুটা কম ও যোগান বেশি থাকায় আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। পরে চাহিদা মতো বাজারে সরবরাহ করেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। আলু উৎপাদনের তুলনায় জায়গা স্বল্পতার কারণে প্রতি বছর হিমাগারে আলু রাখেন কৃষকরা। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতি বছরই হিমাগার মালিকরা আলু রাখার ভাড়া বাড়িয়ে দেন। তবে এ বছর মুন্সিগঞ্জের হিমাগারগুলোতে ভাড়া বাড়বে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিদ্ধেশ্বরী হিমাগারের ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, এখনো মুন্সিগঞ্জে আলু উত্তোলন শুরু হয়নি। তাই রাজশাহী, দিনাজপুর থেকে আলু কিনে এনে হিমাগারে রাখছি। এ বছর ওই অঞ্চলের জমিতে ১৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। কোল্ড স্টোরের ভাড়াসহ ২০-২১ টাকা প্রতি কেজি আলু পড়বে। গত বছর আলুর দাম কম হওয়ায় লোসকান হয়েছে।
অপর ব্যবসায়ী রিপন বলেন, গত বছর লোকসান হয়েছে। এবার আবার আলু কিনে রাখছি। প্রতি কেজি আলু এখন রাজশাহী, দিনাজপুর থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে কিনে আনছি।
মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত প্রতি হেক্টরে ২৫ মেট্রিক টন করে আলু পাওয়া গেছে। সে হিসেবে এ বছর ৮ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হতে পারে।
জেলায় আলু সংরক্ষণের জন্য ৬৪টি সচল হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণের বাইরে থাকে।
ইউনুস কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেডের ক্যাশিয়ার মো. রাজিব হোসেন বলেন, আমাদের ভাড়া এ বছর এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে মনে হয় না এবার ভাড়া বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জেনারেটর, লোড-আনলোড, শ্রমিকের খরচ ও আনুষঙ্গিক খরচসহ হিমাগারে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের ন্যূনতম ৪টাকা ৮০ পয়সা ব্যয় হয়। গত বছর হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য কেজি প্রতি ৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ বছর খরচ বেশি হওয়ায় আরও ২৫ পয়সা বেশি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এর কম হলে লোকসান গোনা ছাড়া উপায় থাকবে না।
দেওয়ান কোল্ড স্টোরেজের মালিক আরশ দেওয়ান বলেন, হিমাগারে সাত লাখ বস্তা আলু রাখা হয়। গত বছর ৫০ কেজির বস্তা ২০০ টাকা করে ভাড়ায় রাখা হয়েছিল। এবারও এ ভাড়ায় রাখা হবে।
মাল্টিপারপাস হিমাগারের মালিক গোলাম মস্তাফা বলেন, গত বছর ৫২-৫৫ কেজির বস্তা হিমাগারে রাখতে ২৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। চলতি মৌসুমে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি।
রিভারভিউ কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, আমাদের হিমাগারে ১ লাখ ৭০ হাজার বস্তা আলু রাখা হয়। শুনেছি বিদ্যুৎ বিল আগের চেয়ে বাড়ানো হবে। সেটার ওপর ভিত্তি করে হয়তো ভাড়া নির্ধারণ হবে। আগের চেয়ে বাড়বে কি না সেটা এখনো নিশ্চিত না।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার যোগনীঘাট এলাকার আলুচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই গত মৌসুমে আলুতে অনেক লোকসান হয়েছে। তাছাড়া আলুর দাম কম। ৫০ কেজির বস্তা হিমাগারে সংরক্ষণ করতে ২০০ টাকার বেশি নেওয়া হলে সেটা জুলুম হবে।
আলুতে লোকসান কমিয়ে আনার বিষয়ে কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, ১০-১৫ বছর আগে মুন্সিগঞ্জ জেলায় ব্যাপক আলুর উৎপাদন হতো। সে হিসেবে মুন্সিগঞ্জে অসংখ্য হিমাগার গড়ে ওঠে। তবে এখন দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে আলু ব্যাপকভাবে আবাদ শুরু হয়েছে। এর ফলে দেশে আলু উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। আলু সংরক্ষণের পরও অনেক আলু থেকে যাচ্ছে। এতে আলুর দাম কমে যাচ্ছে।
প্রতি বছরই কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকারের উচিত আলুকে শিল্পে রূপ দেওয়া। আলুভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ভাতের বিকল্প হিসেবে আলুকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা। সব শেষে যে বছর আলুর উৎপাদন বেশি হবে, তখন ভর্তুকি হিসেবে আলু কিনবে সরকার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খুরশিদ আলম বলেন, দেশে আলুর ভবিষ্যৎ ভালো নয়। দেশে প্রয়োজনের তুলনায় ৪০ ভাগ বেশি আলু উৎপাদন হয়। বিদেশে আলু রপ্তানি করা যাচ্ছে না। প্রয়োজনের তুলনায় আলু বেশি হওয়ায় দাম কমে যাচ্ছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এর মধ্যে হিমাগার ভাড়া বাড়ানো হলে কৃষকরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।